শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন

ক্যান্সার প্রতিরোধী জাদুকরী গুণাগুণ রয়েছে করোসল ফলে

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ৩৮ বার পঠিত
আপডেট : মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩, ৭:৩৮ অপরাহ্ণ

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমর্থন না থাকলেও করোসল ফল, করোসল গাছের পাতা ও ছাল ক্যান্সার প্রতিরোধী জাদুকরী গুণাগুণ রয়েছে এবং ক্যান্সাররোগীর কেমোথেরাপির বিকল্প চিকিৎসা এমন সংবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোসল গাছের চারা কেনার জন্য মানুষ ভীড় করছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন নার্সারীগুলোতে। এই সুযোগে সাতক্ষীরার নার্সারীগুলো ৫০ টাকা দামের করোসল গাছের চারা এখন বিক্রি করছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। ক্রেতারা লাইন দিয়ে সেই করোসল গাছের চারা কিনতে নার্সারীতে ভীড় জমাচ্ছে। এদিকে করোসল নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সাতক্ষীরা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সম্প্রতি বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত তথ্য নিয়ে দেশব্যাপী বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। টেলিভিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর গ্রামের গাজী আশরাফ করোসল (টক আতা) গাছের ফল ও রস খেয়ে তার ক্যান্সার নিরাময় হয়েছে।

এই করসল বা টক আতা গাছ নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের গাজী আলী আশরাফ। গাজী আশরাফের দাবি, ২০১১ সালে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে করোসল গাছের বীজ সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে ৭টি চারা তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে ৬টি ফলবান করোসল গাছ এখনো বেঁচে আছে। নিজের লাগানো করোসল বা টক আতা গাছ থেকে দীর্ঘ ৭ বছর পর প্রথমবার ফল পান তিনি। যার একটির ওজন ছিল ১ কেজি ২৭ গ্রাম। গায়ে কাঁটাযুক্ত করোসল ফলের ভিতরটা অনেকটা আতার মতোই। স্বাদও অনন্য। ক্যান্সার প্রতিরোধে করোসল ফল ও করোসল গাছের পাতা বেশ উপকারী বলে দাবি করেছেন তিনি।

গাজী আলী আশরাফ আরও জানান, ২০২০ সালে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। বয়স বিবেচনায় তাঁকে কেমোথেরাপি দিতে চাননি চিকিৎসকরা। ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালীন সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যদের উপেক্ষা করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেন আর ক্যান্সারের চিকিৎসা নিবেন না। বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে গাজী আলী আশরাফ নিয়ম করে করোসল পাতার রস পান করা শুরু করেন।

গাজী আলী আশরাফ বলেন, করোসল ফল তো আমাদের দেশে দুষ্প্রাপ্য। তাই করোসল গাছের পাতার রস খেতে শুরু করি। প্রতিদিন তিন বেলা করোসল পাতা পানি দিয়ে জ্বালিয়ে চায়ের মতো করে খেতাম। তিন বেলা খেলে সহ্য হতো না। এরপর কমিয়ে ২ বেলা, তারপর আস্তে আস্তে আরো কমিয়ে দেই। একপর্যায়ে সুস্থ হয়ে উঠি এবং এখনো আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। এখন মাঝে মধ্যে খাই। শুধু আমি না, আমার কাছ থেকে ৭ জন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী করোসল গাছের পাতা নিতে আসেন। তারাও উপকার পাচ্ছেন বলে জানি এবং তারা সুস্থ ও ভালো আছেন। করোসল ফল ও পাতা খুবই উপকারী। তবে, তা অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উইকিপিডিয়া বলছে, করোসল বা টক আতার বীজ ও পাতাকে নিউরোটক্সিন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। যা ক্ষতিকর। আবার, একথাও বলা হচ্ছে যে, ক্যান্সার চিকিৎসায় করোসল ফলের অবদান আছে দাবি করে তালিকাভুক্ত করেছে। একই সঙ্গে ক্যান্সারের বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে করোসল ফল ব্যবহারের বেশ প্রচারও রয়েছে।

যদিও ক্যান্সার গবেষণা ইউকে এ সম্পর্কে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে, গ্রাভিওলা বা করোসল ক্যান্সারের নিরাময়ের জন্য কাজ করে এমন কোনো প্রমাণ নেই। পরীক্ষাগার গবেষণায় গ্র্যাভিওলা সূত্রগুলি কিছু ধরনের লিভার এবং স্তন ক্যান্সারের কোষকে মেরে ফেলতে পারে যা নির্দিষ্ট কেমোথেরাপির ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী। তবে এর চেয়ে বড় কোনো চিহ্ন এখনও পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বড় কোনো স্টাডি নেই। তাই আমরা এখনও জানি না এটি ক্যান্সারের চিকিৎসা হিসেবে কাজ করতে পারে কি না।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার কামালনগরের সায়েম ফেরদৌস মিতুল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যিনি একজন ক্যান্সার রোগী এবং কেমোথেরাপি নিয়েছেন। একই সঙ্গে করসলের পাতার রসও খাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি একবার করসল ফল খেয়েছি। এর পাতার রস এখনো সপ্তাহে একবার খাই। করোসল পাতার রস অত্যন্ত এন্টি অক্সিডেন্টাল। এটি যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কওে, তেমনি টানা দুই-তিনদিন খেলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমনটি হয় কেমোথেরাপি দিলে।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: সবিজুর রহমান জানান, করোসল গাছের ফল, পাতা বা ছাল খেলে ক্যান্সার সেরে যাবে এ তথ্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনই ভিত্তি আমাদের কাছে নেই। করোসলের পাতা বা ফলের রসে ক্যান্সার সারে এ ধরনের কোন গবেষণা কোথাও পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন অফিস থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রেসনোট দেয়া হয়েছে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয়। তিনি এ বিষয়ে সকলকে আরও সর্তক হওয়ার আহবান জানান।

অসমর্থিত সূত্র জানায়, করোসল ফল ও করোসল গাছের পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এই করোসল ফল ও করোসল গাছের পাতার রস খেলে ক্যান্সাররোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয় না। এই ফল ও পাতার রস ক্যান্সার সেলের মৃত্যু ঘটাতে কেমোথেরাপির চেয়ে এটি ১০ হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী। করোসল গাছে রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস অ্যাস্টোজেনিন নামে এক ধরনের যৌগ। এই যৌগ ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিরুখে দেয়, যা কেমোথেরাপি করে। ফলে ক্যান্সার কোষ আর বাড়তে পারে না। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, প্রোসটেট ক্যান্সারে এটি বেশি কার্যকর। এছাড়া নিয়মিত এই ফল খেতে পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়। শরীরও চাঙ্গা থাকে এবং দুর্বল ভাব আসে না। রক্তকে শোধিত করতেও এই ফলের গুণ অনস্বীকার্য। শুধু ফলই নয়, এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রোসটেট সমস্যাও নিরাময় হয়ে যায়।

ডিম্বাকৃতির এই ফল ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং একটি মাঝারি দৃঢ় গঠনবিন্যাস রয়েছে করোসল ফল রসালো, অ্যাসিডিক, সাদাটে এবং সুগন্ধযুক্ত। ফলটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১ এবং ভিটামিন বি-২ রয়েছে। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ করোসল ফল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি এন্টিক্যান্সার ফল হিসেবে বিবেচিত।

অসমর্থিত সূত্র আরো বলছে, ক্যান্সার রোধে করোসল বা টক আতার উপকারিতা পৃথিবীর বহু দেশেই প্রমাণিত। এই ফলের এতটাই গুণ, এই ফল খেলে ক্যান্সাররোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয় না। শরীরও চাঙ্গা থাকে, দুর্বল ভাব আসে না। শুধু ফলই নয়, এই গাছের ছাল ও পাতায় লিভার সমস্যা, আর্থরাইটিস ও প্রোসটেট সমস্যায়ও নিরাময় হয়ে যায়। চায়না, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, ব্রাজিল, মেক্সিকো বিভিন্ন দেশে এই ফল খুবই  বেশী জন্মে। এ ফল শীত প্রধান অঞ্চলে বাঁচতে পারে না।

ইন্টারজার্নার অব মণিকুলার সায়েন্সের প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, আগ্নেয় অন্ত্র পরিষ্কারক হিসেবে টক সমৃদ্ধ করোসল ফল কাজ করে। একটি গবেষণায় জানা গেছে, উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি থাকায় এ ফল চোখের সংক্রমণ চিকিৎসায় খুবই কার্যকর।

বিশ্বের সমাদৃত ম্যাগাজিন ফুড এণ্ড ফাংশন এ প্রকাশিত লেখাতে বলা হয়েছে, করোসল ফল বা টক আতার ফাইটনট্রিয়েন্টগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং টিউমারের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। সম্প্রতি মেক্সিকোর টেপিক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা করোসল ফল বা টক আতার এসিটোজিন আবিষ্কার করেছেন-যা ক্যান্সারের শক্তিশালী কেমোথেরাপিউটিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। আর নেব্রস্কা মেডিকেল সেন্টারের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, করোসল বা টক আতার পাতার নির্যাস ক্যান্সার কোষের গ্লুকোজের বিস্তারকে রোধ করে। করোসল ফল বা টক আতা ফলের পাশাপাশি এর পাতাও উপকারী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া হলে উপকৃত হওয়া সম্ভব।

করোসল ফল বা টক আতার ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে তথ্য সূত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ১.উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ। ৬ষ্ঠ খন্ড (২০১০)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২. ভেষজ উদ্ভিদের কথা, প্রফেসর ড. নিশীথ কুমার পাল, ৩.উদ্ভিদকোষ, শেখ সাদী, ৪. উদ্ভিদ বিজ্ঞান শব্দকোষ, প্রফেসর ড. নিশীথ কুমার পাল, ৫. উদ্ভিদ বিজ্ঞান অভিধান, শেখর রঞ্জন সাহা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর