বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব প্রফেসর মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিনের ইন্তেকালের পর কে হচ্ছেন নতুন খতিব তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে খতিব হিসেবে আটজন শীর্ষ আলেমের নাম আলোচনায় এসেছে।
তবে আলেম-ওলামারা মনে করেন জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে যেন কোনো বিজ্ঞ আলেমকে নিয়োগ দেয়া হয়। যিনি হবেন সহিহ আকিদাপন্থী। কোনো রাজনৈতিক নেতা, বেদায়াতি, মাজারপন্থী ব্যক্তিকে যেন বায়তুল মোকাররমের খতিব নিয়োগ দেয়া না হয়। সাবেক খতিব মরহুম মাওলানা ওবায়দুল হকের মতো সবর্জন গ্রহণযোগ্য আলেমকে জাতীয় এ মসজিদের খতিব হিসেবে দেখতে চান আলেমরা। এ জন্য আলেমদের একটি গ্রুপ এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছেন। তারা ঐকমত্যে আসতে শীর্ষ আলেমদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন, সালাহ উদ্দিন সাহেব সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন। তা ছাড়া দেশে আলেমদের মধ্যে অনেক মতভেদ রয়েছে। এ জন্য এ পদে সবর্জন গ্রহণযোগ্য কাউকে বাছাই করা বেশ কঠিন। আমরা তাড়াহুড়া করছি না। সরকার ভেবে চিন্তে এ পদে নিয়োগ দেবে।
২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি মাওলানা সালাহ উদ্দিনকে বায়তুল মোকাররমের খতিব নিয়োগ দেয় সরকার। তখন তাকে মাজারপন্থী-বেদায়াতি উল্লেখ করে দেশের আলেমরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলও করেন আলেম-ওলামারা। অনেকে তিনি খতিব থাকালে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়বেন না বলেও ঘোষণা দেন। তার পরও তিনি আমৃত্যু দেশের জাতীয় এ মসজিদের খতিবের দায়িত্বে ছিলেন।
তবে ২০১৫ সালে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে তিনি আর বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়াতেন না। তার পরও সে সময় সরকার খতিব হিসেবে আর কাউকে নিয়োগ দেয়নি। বায়তুল মোকাররমের অন্য ইমামরা পালাক্রমে জুমার নামাজে ইমামতি করতেন। মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করলে এ পদটি খালি হয়েছে।
এ কারণে এখন নতুন খতিব হিসেবে কে নিয়োগ পাচ্ছেন তা নিয়ে আলেম-ওলামাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কে এ পদে আসতে পারেন তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আলেমরা মনে করেন সরকার যেন এবারো গতবারের মতো ভুল না করেন। বিতর্ক আছে এমন কাউকে যেন নিয়োগ দেয়া না হয়। গ্র্যান্ড মুফতির আদলে জাতীয় মসজিদের খতিব হিসেবে যেন সর্বজন গ্রহণযোগ্য কোনো বিজ্ঞ আলেমকে নিয়োগ দেয়া হয়।
যারা আছেন আলোচনায় : বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে দেশের শীর্ষ আটজন আলেমের নাম আলোচনায় রয়েছে। তারা হলেন- আল হাইয়াতুল উলিয়া ও বেফাকের বর্তমান সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, শোলাকিয়া জাতীয় ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির ও হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রুহুল আমিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ড. কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস মুফতি ড. ওয়ালীউর রহমান খান নদভী ও বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, একজন বিতর্কমুক্ত ও সবার কাছে আস্থাভাজন বিজ্ঞ আলেমকে আমরা বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে দেখতে চাই। মাওলানা ওবায়দুল হকের মতো যার সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।
বিশিষ্ট আলেম ও রাজধানীর একটি মসজিদের খতিব মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান বলেন, মাওলানা সালাহ উদ্দিনের নিয়োগের সময় যে রকম বিতর্ক দেখা দিয়েছিল এবার যেন সে রকম না হয়। সরকার যেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় এ রকম একটি শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ না দেয়। যাকে নিয়োগ দেয়া হবে তার যেন ধর্মীয় ও নৈতিক অবস্থান দেখা হয়। প্রয়োজনে একাধিক খতিব নিয়োগ দেয়া যেতে পারে বলেও তিনি মত দেন।