আমাদের ইলিশ, ইলিশ আমার অহংকার শৈশব থেকে জানি, জাটকা ইলিশ নিধন রোদে আইনটা তবে মানি। জল যার জলা তার এটাই হোক নীতি, তাহলে জেলের ইলিশের প্রতি বাড়বে অনেক প্রীতি। ২০০৯ সালে তৎকালীন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহার হাত ধরে চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের যাত্রা শুরু হয় পরবর্তীতে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেন তৎকালীন মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি এবার ১৫ তম চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসব ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। এখন আর চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবটি একার নয় এটি চাঁদপুরবাসীর সর্বজন স্বীকৃত ও প্রাণের উৎসব। এই উৎসবকে নিয়ে আজকের লেখাটি।# এছাড়াও ইলিশের শহর চাঁদপুরে আসতে হয় কিভাবে,# শত বছর বয়সি চাঁদপুরের মাছের হাট,# চাঁদপুরে ইলিশ চেনার উপায়, # চাঁদপুর আসলে ইলিশ খাবেন কোথায় # থাকার, খাবার হোটেলের ঠিকানা ও নাম#বেড়াতে যাবেন কোথায় । বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকেই চাঁদপুরে আসা যায় চট্টগ্রাম সিলেট থেকে ট্রেন করে,ঢাকা থেকে লঞ্চে চাঁদপুর যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। দিনে দিনেও ঢাকা থেকে চাঁদপুর বেড়িয়ে আসা যায়। আবার আসা-যাওয়ার দুই রাতই কাটিয়ে দেওয়া যায় লঞ্চে। যেমন ঢাকা সদরঘাট থেকে রাত ১২টার লঞ্চে রওনা দিলে সকালবেলা চাঁদপুর এ পৌঁছাবেন। সারা দিন কাটিয়ে আবার রাত ১২টার লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়া যাবে। এতে চাঁদপুর এ গিয়ে কোনো হোটেল ভাড়া করার প্রয়োজন হবে না। আর যদি জ্যোৎ স্না রাত হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
সদরঘাট থেকে ছেড়ে মেঘনা নদী পৌঁছুতে সময় লাগে ঘণ্টা দুইয়ের মতো। এখান থেকে চাঁদপুর পৌঁছানো পর্যন্ত বাকি ২ ঘণ্টা সময়ের পুরোটাই দেখা যাবে ইলিশ ধরার দৃশ্য। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মধ্যে চলতে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরা।
চাঁদপুরে ইলিশ কিনতে চাইলে
চাঁদপুর গেলে অনেকেই ইলিশ কিনতে চান। সেজন্যে বড় স্টেশন চলে যেতে হবে। এর বিকল্প হরিণা ঘাট,আর চাঁদপুরে খুচরা ইলিশের বাজার বিপুনী বাগ। শহরের বাইরে আরেকটি বাজার আছে নাম হলো বাংলাবাজার এখানেও বিকেল বেলা একেবারেই নদীর মাছ উঠানো হয় টাটকা।ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য বাজার থেকেই সুন্দর করে বরফ দিয়ে প্যাকেট করে দেবে। নিশ্চিন্তে ইলিশ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন। আর মাছ কেনার সময় রূপালি রং দেখে কিনবেন। চাঁদপুর বড় স্টেশন মোকামের বেশিরভাগ ইলিশই চাঁদপুরের নয়। এখানে বরিশাল, ভোলা কিংবা সামুদ্রিক ইলিশই বেশি। চাঁদপুরের ইলিশ চেনার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় আছে। এখানকার ইলিশ একেবারে রুপালি রং। আর অন্যান্য জায়গার ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা আছে। নোনাপানির ইলিশে রুপালি রংয়ের সঙ্গে লালচে আভা থাকে। মিষ্টিপানি বা নদীর ইলিশের রং চকচকে রুপালি হয়।
চাঁদপুর যাওয়ার উপায়
ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন চলাচল করে এমভি তাকওয়া, এমভি সোনারতরী, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি ঈগল, এমভি আল বোরাক, এমভি ঈগল এমভি রফরফ প্রভৃতি। এসব লঞ্চে ঢাকা-চাঁদপুর অথবা চাঁদপুর-ঢাকার ভাড়া প্রথম শ্রেণির সিঙ্গেল কেবিন ৮০০-১০০০ টাকা। প্রথম শ্রেণির ডাবল কেবিন ১২০০-১৮০০০ টাকা। তৃতীয় শ্রেণির ভাড়া জনপ্রতি ২০০, টাকা প্রথম শ্রেণী ৩৫০ টাকা। ঢাকার সদরঘাট থেকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এসব লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার লঞ্চের সময়সূচী
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সারা দিনই চাঁদপুর এর বাস ছাড়ে। এছাড়া ট্রেনেও যাওয়া যাবে।
ইলিশ কোথায় খাবেন
চাঁদপুর নেমে রিকশা করে চাঁদপুর বড় ষ্টেশন এবং সেখান থেকে ট্রলার অথবা নৌকায় ৩০ মিনিটের মধ্যে চলে যাবেন রাজরাজেশ্বর চরে। এই চরের খুব কাছেই মেঘনা নদী, পদ্মা আর ডাকাতিয়া নদীর মোহনা কোড়ালিয়ার মুখে মিলছে। ঘাট থেকে ৫ মিনিট হাটলেই মনু মিয়ার হোটেল। কাছাকাছি গেলেই ইলিশের গন্ধে মাতোয়ারা হবার আশঙ্কা আছে। শুধু ইলিশ মাছের ভাজি কিংবা রান্না ইলিশ নয় আপনি সেখানে ইলিশের ডিমও খেতে পারবেন আর ইলিশপুরের (ইলশাহাট) ইলিশ মাছ কেনার জন্য সন্ধ্যা এবং খুব ভোর বেলায় গেলেই ভালো।
কোথায় থাকবেন এবং খাবেন।
ইলিশ খেতে যেতে চাইলে দিনে দিনে ফেরা যায়, তাই থাকার চিন্তা খুব একটা করতে হয় না। এরপরও চাঁদপুরে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য উন্নত মানের হোটেল সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে তিন তারকা মানে হোটেল গ্র্যান্ড ইলিশা, গাজী বোডিং, হোটেল প্রিন্স,হোটেল তাজমহল, হোটেল জোনাকী, হোটেল শ্যামলী অন্যতম।, খাওয়ার হোটেলের মধ্যে হিলিশা কিচেন, হোটেল অ্যারোমা, হোটেল এম্বোশিয়া, সস্তায় খেতে হলে লঞ্চঘাটে বিআইডব্লিউটিএর ক্যান্টিন মালেকের হোটেল, বড় স্টেশন হোটেল রশিদ।
কবিতাটি ছিল যথার্থ, ১৫তম চতুরঙ্গ ইলিশুৎসবে এই ছোট্ট কবিতাটি বলেছেন বিশিষ্ট সংগঠক সামাজিক সংগঠন আপন সভাপতি ও চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারি ক্লাবের সেক্রেটারি রোটারিয়ান ডা. রাশেদা আক্তার, আমাদের ইলিশ, ইলিশ আমাদের অহংকার শৈশব থেকে জানি, ইলিশ রক্ষায় ঝাটকা নিধন, আইনটা তবে মানি। জাল যার জলা তার, এটাই হোক নীতি, তবেই জেলের ইলিশের প্রতি বাড়বে অনেক প্রীতি। বর্তমান প্রেক্ষাপট ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় সেখানে সংস্কৃতি কিংবা কবিতা আবৃতি কোনটাই কাজে আসবে না কিংবা উঠান বৈঠক কারণ তাদের আগে কর্ম ও খাবারের সংস্থান করতে হবে তারপরেই তাদের উপর আইন চাপিয়ে দেওয়া যাবে। একজন জেলের জাল ও জলের উপর কোন অধিকার নেই কারণ সে শুধুমাত্র কামলা খাটে তার শ্রম বিনিময় ছাড়া। দাদন ব্যবসায়ীরা নৌকার জাল ইঞ্জিনের তেল খাবার জ্বালানি সবই সরবরাহ করে শুধুমাত্র সেখানে জেলেরা দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ করে তাই ইলিশের প্রতি তাদের ন্যূনতম ভালোবাসা নেই বললেই চলে। ইলিশ মাছের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রি কোনটাই জেলেদের হাতে নেই সম্পূর্ণ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আর এর পেছনে বড় বড় দাদন ব্যবসায়ী রাঘব বোয়ালরা জড়িত তাই আমরা যত প্রচার ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠান করি না কেন আগে জেলেকে অধিকার দিতে হবে জাল ও জলের। রোটারিয়ান ডা.রাশেদা আক্তারের কবিতাটি ছোট হলেও এর মর্মার্থ অনেক। চাঁদপুর কে ব্র্যান্ডিং সিটি অফ হিলশা যার কল্যাণে আমরা পেয়েছি তিনি হলেন সাবেক জেলা প্রশাসক আবদুস সবুর মন্ডল, প্রাপ্তি পেছনে যার ঘাম জড়িত তিনি হলেন চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবের রূপকার মহাসচিব হারুন আল রশিদ। চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসবটি চাঁদপুর কে চিনিয়েছে সারা বাংলাদেশে। এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশ্বের যে প্রান্তে যাবেন শুধু বলবেন আমার বাড়ি চাঁদপুর বেশ হয়ে গেল বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশে ইলিশের কল্যাণে আমরা অনেক পরিচয় পেয়েছি অনেক পরিচিত হয়েছি। সাধুবাদ জানাই চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশিদকে। সংস্কৃতি শিল্প সাহিত্য দিয়েই তিনি পরিচয় করে তুলেছেন প্রিয় জন্মস্থান চাঁদপুর জেলাকে। অবশ্যই চাঁদপুরে অনেক বীরের জন্ম হয়েছে শিক্ষক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি প্রশাসনের সর্বোচ্চ লেভেলের কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রী সৌভাগ্য এই জেলায় জন্ম হয়েছিল অবিভক্ত পাকিস্তানের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির, আমরা প্রধানমন্ত্রীও পেয়েছি, ইতিহাস নয় শুধু দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রথম নারী শিক্ষা মন্ত্রী। তবে সব চাপিয়ে ইলিশের পরিচয় সর্ব আগে। এই পরিচয়টি নিয়ে কেউ রাজনীতি করে না এটি সর্বজনীন।
আবহমান বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতে মাছের প্রশ্নে ইলিশ যে উচ্চতম আসনে আসীন তা কিন্তু হাজার বছরের চর্চারই ফল। এর কারণ, ইলিশের অনন্য স্বাদ। পাশাপাশি আছে ইলিশ রান্নার কয়েকশ প্রকরণ। এত বৈচিত্র্যের কল্যাণেই বাংলার হাজারো মাছকে টেক্কা দিয়ে গড়ে উঠেছে বাঙালির ইলিশ সংস্কৃতি। এ কারণেই ইলিশ শুধু আমাদের জাতীয় মাছই নয়, ইলিশ আমদের অস্তিত্বেরও এক নিবিড়তম অংশ
বাঙালির মৎস্যপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত। সাগর-নদী-নালা-খাল-বিল আর পুকুর তথা জলের অপরিসীমতার কল্যাণে যুগে যুগে মাছ বঙ্গ অঞ্চলের মানুষের রন্ধনশালা এবং খাদ্য তালিকার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে আছে। এ জন্যই তো কোনো এক লোককবি বলে গিয়েছেন- ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। আর ‘মেছো বাঙাল’ উপাধি কি এমনি এমনি কপালে জুটেছে বাংলার মানুষের! আমাদের এখানকার মাছের যদি তালিকা করা হয় দেখা যাবে, মাছেরই আছে হাজার ধরন আর লাখো বরণ। যদি প্রশ্ন করা হয়- স্বাদে, বর্ণে, গন্ধে কোন মাছ সেরা? তবে ভোজনরসিক মাত্রই মাথা না চুলকিয়ে বলবেন- ‘কোন মাছ আবার, ইলিশ মাছ’!
কথা হচ্ছে ইলিশ কেন সেরা। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে ফিরে যাই। প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে একটি শ্নোক আছে- ‘সর্বেষামেব মৎস্যেনাম ইল্লিশ :শ্রেষ্ঠ উচ্যতে’, সরল বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায়, সব মাছের সেরা মাছ ইলিশ। ইলিশের রাজর্ষিকতার আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। উৎপত্তিগতভাবে ‘ইলিশ’ নামক শব্দের ব্যবচ্ছেদ করা হলেও তার শ্রেষ্ঠত্ব বোঝা যায়। ইলিশ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। তবে সংস্কৃতে যে শব্দ আছে তা হলো- ‘ইলীশ’। ইল+ঈশ এই সন্ধি-বিচ্ছেদে ‘ইল’ হলো জলের মধ্যে বা জলে নামা আর ‘ঈশ’ মানে হলো রাজা, শাসক বা কর্তা। তাহলে এই শব্দের মানে দাঁড়ায় যা ‘জলের রাজা’ তাই ‘ইলীশ’।
আবহমান বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতে মাছের প্রশ্নে ইলিশ যে উচ্চতম আসনে অধীন তা কিন্তু হাজার বছরের চর্চারই ফল। এর কারণ, ইলিশের অনন্য স্বাদ। পাশাপাশি আছে ইলিশ রান্নার কয়েকশ প্রকরণ। এত বৈচিত্র্যের কল্যাণেই বাংলার হাজারো মাছকে টেক্কা দিয়ে গড়ে উঠেছে বাঙালির ইলিশ সংস্কৃতি। এ কারণেই বলতে হয়, ইলিশ শুধু আমাদের জাতীয় মাছই নয়, ইলিশ আমদের অস্তিত্বেরও এক নিবিড়তম অংশ। আর এ কারণেই কবি বুদ্ধদেব বসু ইলিশকে বলেছেন, ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’।
ইলিশ আমাদের শস্য-ই তো বটে। বিশ্বব্যাপী মাছ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ সেন্টারের তথ্যমতে, পৃথিবীজুড়ে প্রতি বছর মোট মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ১৭৯ মিলিয়ন টন। এই মাছের মধ্যে ইলিশের উৎপাদন যদিও মাত্র ০.৭০ থেকে ০.৭৫ টন কিন্তু তার সিংহভাগই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে, যার পরিমাণ ০.৫৩ মিলিয়ন টন। জাতীয়ভাবেও ইলিশ আমাদের অর্থনীতিতে রাখছে অবদান। মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ; যা ১২.১৫ ভাগ এবং মোট জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ লাখ মানুষেরও বেশি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইলিশের সঙ্গে জড়িত।
ইলিশ নিয়ে এই মাতামাতির শুরুটা কবে তা বলা মুশকিল। তবে আশির দশকের শুরুতে দেশে উৎপাদিত মাছের সর্বোচ্চ অবদান ছিল ইলিশের, যা প্রায় ২০ শতাংশ। কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং অতি মুনাফালোভী মহাজন ও জেলেদের মা মাছ ও গণহারে জাটকা নিধনের ফলে নব্বইয়ের দশকে এসে এটা কমতে কমতে দাঁড়ায় সাত থেকে আট ভাগে। ফলে ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। নব্বই দশকের শুরুতে ইলিশ বাঁচানোর তাগিদ থেকে বিটিভিতে প্রচারিত হতো একটি সচেতনতামূলক টিভিসি। ‘সাদেক আলী’ ও ‘মাস্টার সাহেব’ দুটি চরিত্রের ছড়ায় ছড়ায় কথোপকথন এখনও মনে থাকবে সে সময়কার মানুষের নিশ্চয়। সাদেক আলী কারেন্ট জাল নিয়ে নদীতে জাটকা ধরছে আর ছড়া কাটছে মুখে মুখে- ‘মাছের গুষ্টি দেখাও ফাল/লগে আনছি কারেন্ট জাল,/কপালের ফের কী আর করা/আন্ডা-বাচ্চাসহ পড়বা ধরা,/ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা/কারেন্ট জালে আটকা। ইলিশ মাছের পোনারে/ট্যাকার খবর শোনা রে।’ ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনের স্ট্ক্রিপ্টে এতে অভিনয় করেছিলেন সুজা খন্দকার ও মাহফুজুর রহমান। এই প্রমোশনাল টিভিসির পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তরের নানামুখী উদ্যোগে আবার ফিরেছে ইলিশের সুদিন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশ উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টন। ১০ বছর পর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইলিশ আহরিত হয় ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন। আর ২০১৯-২০ সালের গেল অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন। আর এ বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ টন।
আগস্ট মাসে বর্ষার শেষাংশে ইলিশ ধরার পূর্ণকাল। কিন্তু আফসোসের বিষয়, গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার নদী অববাহিকায় ইলিশ ধরা পড়ছে বেশ কম। বাজারেও নেই তেমন ইলিশ। ফলে দামও প্রায় আকাশছোঁয়া। নদীতে ইলিশ না মিললেও কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন এলাকার সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর। নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করছে। কারণ নদীতে ইলিশের প্রবেশপথে ও সাগর মোহনায় অসাধু জেলেরা বেহুন্দি, চরগড়া, খুঁটাজাল, ভাসা জালের মতো ছোট ফাঁসের অবৈধ জাল পাতার চর্চা বাড়ছে। এসব জালে বাধা পেয়ে ইলিশ আবার সাগরে ফিরে যাচ্ছে। পাশাপাশি নদীর ডুবোচর, সাগর থেকে নদীতে প্রবেশের মুখে বাধা, উত্তরের ঢলে পলিবর্জ্যের পরিমাণ বেশি থাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণেও ইলিশ এ বছর তার গতিপথ বদলাতে পারে। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন। সদ্য শেষ হওয়া তার এক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, ‘মা’ ইলিশদের যদি ডিম দেওয়ার পরিপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া যায়, তাহলে ২০০ গ্রামের একটি ইলিশ মাছ থেকে বছরে প্রায় দেড় লাখ ইলিশের বাচ্চা পাওয়া যাবে। পদ্মা নদীর ইলিশ নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, ১৪০০ গ্রামের একটি ইলিশ যদি ডিম দেওয়ার সুযোগ পায় তাহলে প্রায় ১৬ লাখ ইলিশের বাচ্চা হবে। আর্থিকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, মাত্র একটি ইলিশ মাছ থেকেই ৭৬ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। ইলিশ সংরক্ষণে অতীতের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি নতুন ভাবনা ভাবার এখনই সময়।
খাদ্য, সংস্কৃতি আর অর্থনীতির ফাঁক গলে ইলিশ যে আমাদের সাহিত্যেও ঠাঁই করে নিয়েছে, সে কথা বলাই বাহুল্য। মানিক বন্দ্যোপাধ্যয়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’তে তিনি লিখেছেন- ‘নৌকার খোল ভরিয়া জমিতে থাকে মৃত সাদা ইলিশ মাছ, লণ্ঠনের আলোয় মাছের আঁশ চকচক করে, নিষ্পলক চোখগুলিকে স্বচ্ছ নীলাভ মণির মতো দেখায়।’ সুসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ভোজনরসিক হিসেবে পাঠক মহলে বেশ পরিচিত, তার ইলিশপ্রীতি তো ছেলেমানুষী পর্যায়ে। সেই গল্প বলা যাক- একবার এক পাঞ্জাবি অধ্যাপকের সঙ্গে মুজতবা আলীর ভীষণ তর্ক বাধে। তর্কের বিষয়- ‘কোন খাবার শ্রেষ্ঠ’ এ নিয়ে। মুজতবা আলীর মতে, শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সরু চালের ভাতের সঙ্গে পদ্মার ইলিশ। অপরপক্ষে পাঞ্জাবি অধ্যাপকের কথা, শ্রেষ্ঠ খাবার বিরিয়ানি। তর্কাতর্কি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় যে, ওই অধ্যাপকের সঙ্গে রাগ করে সাত দিন কথা বলাই বন্ধ রেখেছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলী! স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময়ে লোকমুখে ইলিশ নিয়ে একটি ছড়া বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ফলে দেখা যায়, ইলিশ কখনও কখনও আমাদের জাতীয়তাবাদেরও অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ছড়া হলো- ‘ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাড়ি/ইয়াহিয়া ভিক্ষা করে/শেখ মুজিবের বাড়ি।’
জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লোকমুখে শোনা একটি গল্প বলি। সিরাজগঞ্জের সুধী সমাজের নিমন্ত্রণে একবার কলকাতা থেকে এসেছেন কবি। সে সময় সিরাজগঞ্জের ইলিশ বেশ বিখ্যাত তার আকার ও স্বাদের কারণে। তো কবির সম্মানে ইলিশের নানা পদ রান্না হয়, যাকে বলে ইলিশের মহাভোজ! কিন্তু তিনি ইলিশ অল্পই খেলেন এবং খেতে অপারগতা জানালেন। আয়োজকরা তো বেশ চিন্তিত, রান্না কি তবে ভালো হয়নি! কবি নজরুল তাদের মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন, রান্না অতুলনীয়ই হয়েছে কিন্তু এর চেয়ে বেশি খেলে শরীর থেকে যে ইলিশের সুবাস বেরোবে, তাতে আবার যদি ক্ষুধার্ত বিড়াল তেড়ে আসে, এই ভয়েই ইলিশ খেতে অধমের অপারগতা!
অতীতের মতোই স্বাদে, বর্ণে, গন্ধে রাজর্ষি ইলিশ তার মাহাত্ম্য ধরে রাখুক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে। হাজার বছর পরেও যেন রসনাপ্রিয় বাঙালি তার রসনাবিলাসের সঙ্গী করতে পারে ইলিশকে, এটাই হোক কামনা।…………….ইলিশকে ঘিরে প্রায় ১০০ বছর আগে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে গড়ে ওঠে ইলিশের বিশাল হাট। এটি এখন চাঁদপুর মাছঘাট হিসেবে পরিচিত। জাতীয় মাছ ইলিশ এই জেলার নদীগুলোতেই সবচেয়ে সুস্বাদু হয়। চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদ ভোলা যায় না। জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য তাই বেছে নেওয়া হয়েছে ইলিশ মাছকে। জেলায় ঢুকলেও এর প্রমাণ মেলে।
চাঁদপুর শহরের প্রবেশদ্বারে সুসজ্জিত ইলিশ চত্বর। বিশাল আকারের এই ইলিশ সবাইকে স্বাগত জানায় তার নিজের রাজ্যে।চাঁদপুর শহরের প্রবেশদ্বারে সুসজ্জিত ইলিশ চত্বর। বিশাল আকারের এই ইলিশ সবাইকে স্বাগত জানায় তার নিজের রাজ্যে।
চাঁদপুর শব্দের সঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসে ইলিশের কথা। জাতীয় মাছ ইলিশ এই জেলার নদীগুলোতেই সবচেয়ে সুস্বাদু হয়ে বড় হয়। যিনি একবার চাঁদপুরের ইলিশ খান, তিনি এর স্বাদ ভুলতে পারেন না। তাই এই ইলিশ ঘিরেই হয়েছে জেলার ব্র্যান্ডিং। চাঁদপুর এখন হয়ে গেছে ইলিশের বাড়ি।
এই যে ইলিশ ঘিরে একটা জেলার পরিচিত আনুষ্ঠানিক রূপ পেল, এর পেছনে আছেন সরকারি কর্মকর্তা। সাবেক চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সবুর মণ্ডল। তিনি ২০১৭ সালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক থাকার সময় ইলিশকে জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বেছে নেন। চাঁদপুরের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলাপ করে ইলিশের প্রজনন, উৎপাদন ও বেচাকেনার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর পেছনে আরেকটি করুন ইতিহাস এক সংস্কৃতি কর্মীর লড়াই করে যাওয়া , আর সেই লড়াইয়ে তিনি প্রথম দিকটায় অল্প কয়েকজন সংস্কৃতি কর্মী, শিল্পসাহিতিক ,সাংবাদিককে পেয়েছিলেন পরবর্তীতে যুক্ত হয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তা থেকে মন্ত্রী স্থানীয় রাজনীতিবিদরা পূর্ণতা পেয়েছিল চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসব নামে। মহাসচিব সংস্কৃতি কর্মী ও সংগঠক হারুন আল রশিদ, উনার প্রয়াতি স্ত্রী শ্রদ্ধেয় তাহামিনার রশিদ এই নাম গুলো স্মরণীয় হয়ে থাকবে যতদিন চাঁদপুরের নাম থাকবে ব্র্যান্ডিং সিটি অফ হিলিশা। তবে ইলিশের রাজধানীর খ্যাত এই চাঁদপুরের ইলিশ সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখে সরকারি কর্মকর্তা, সরকারপক্ষ, বিরোধী পক্ষ রাজনীতিবিদ সকলকে এ জায়গায় সর্বজনীন হতে হবে। তাহলে আরো নাম ছড়াবে আয়োজনটি আরো সুন্দর হবে। আর পূর্ণতা পাবে চাঁদপুর ইলিশের রাজধানী। ইলিশ কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসা বাড়াতে দেশে এবং দেশের বাইরে অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ করে প্রচার আরো বেগবান করতে হবে। যার ফলে সৃষ্টি হবে অসংখ্য কর্মসংস্থানের।
মৎস্যজীবী, ইলিশ ব্যবসায়ী, মৎস্য কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশকে ঘিরে প্রায় ১০০ বছর আগে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে গড়ে ওঠে ইলিশের বিশাল হাট। যেটি এখন চাঁদপুর মাছঘাট হিসেবে পরিচিত। এই ঘাটে ইলিশের মৌসুমে যেমন ক্রেতাদের ভিড় থাকে, অন্য সময়ও কাছাকাছি ধরনের ভিড় হয়। দেশের ক্রেতা যেমন থাকেন, থাকেন দেশের বাইরের ক্রেতাও। দাম যা–ই হোক, ইলিশপ্রেমীরা পছন্দের মাছটি নিতে পিছপা হন না। বাজার ঘুরে দরদাম করে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফেরাতেই তাঁদের সব আনন্দ!
এই মাছঘাটের প্রবীণ ইলিশ বিক্রেতা ও মৎস্য বণিক সমিতির ১৯৭৬ সালের সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর আলী সরকার বলেন, ‘সাল মনে পড়ছে না, তবে আমি পাকিস্তান আমল থেকে এই মাছঘাটে ইলিশ বিক্রি করি। ২০০০ সালে আমার ছেলেকে মাছ বিক্রির কাজে বসিয়ে অবসর নিই।’ তাঁর ভাষ্য, চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে চরভৈরবী পর্যন্ত প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত। তখন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন ছিলেন। জেলেরা জাল ফেললেই ইলিশে ভরে যেত। পরে তাঁরা এসব ইলিশ পণ হিসেবে (৮০টি ইলিশে এক পণ) ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। এক পণ ইলিশের দাম ছিল ৫ টাকা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রতি মণ ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় কেনাবেচা হতো। এখন সেই ইলিশ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় মণে কেনাবেচা হয় এই ঘাটে।
চাঁদপুর মাছঘাটের আড়তদার মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলেন, এই মাছঘাটে ইলিশ কেনাবেচা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের নিয়ে বড় স্টেশন এলাকায় রেলওয়ের জমিতে ১৯৭৫ সালে গঠিত হয় মৎস্য বণিক সমিতি। বর্তমানে এই সমিতিতে ২৮৭ জন সদস্য আছেন। তাঁদের অধিকাংশই বংশপরম্পরায় এখনো ইলিশ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব সদস্যের মাধ্যমে প্রতিদিন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও শত শত মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়। তবে এখন এর অধিকাংশ ইলিশ আসে সাগরমোহনা থেকে। নানা কারণে চাঁদপুরের পদ্মা–মেঘনায় আর আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। পেলেও সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এই ঘাটে আগের মতো ইলিশ কেনাবেচা নেই। এই মাছ রেলপথ দিয়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম, আখাউড়া দিয়ে ভারতে এবং নৌপথে গোয়ালন্দ হয়ে সারা দেশে চলে যায়।
ইলিশ নিয়ে গবেষণার জন্য চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। আশির দশকের মাঝামাঝি এখানে শুরু হয় ইলিশ নিয়ে গবেষণা। বর্তমানে ১৪ জন বিজ্ঞানী ইলিশ নিয়ে দুই ধরনের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ধরনের গবেষণা ইলিশের মজুতসংক্রান্ত। দ্বিতীয় ধরনটি ইলিশের প্রজনন বা বংশবিস্তার নিয়ে। এখানকার গবেষকদের দাবি, এই গবেষণার কারণে ২০০৪ সালের পর থেকে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তাদের প্রায় ৩৩ বছরের গবেষণার সফলতায় দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের ইলিশ গবেষক আনিসুর রহমান বলেন, ‘১৯৮৬-৮৭ সালে দেশে ইলিশ নিয়ে প্রথম গবেষণা শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে ইলিশের পরিচয়, তার প্রজাতি, বসবাস ও চলাচল নিয়ে গবেষণা শুরু করি। আমরা শুরু থেকে ইলিশ নিয়ে সাগরে ও নদ–নদীতে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। এ জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের সাগর বা নদীতে থাকতে হয়। পাশাপাশি মৎস্য অধিদপ্তর ও ইনস্টিটিউটেও এই ইলিশ নিয়ে সারা বছরই নানা ধরনের কাজ চলছে। আমাদের এই গবেষণায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছেন। আজ আমাদের গবেষণার ফলে সরকারও ইলিশ রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
এই ইলিশ গবেষক বলেন, ২০০০ সালের দিকে সারা বছর ইলিশের উৎপাদন ছিল এক থেকে দেড় লাখ টন। তবে ২০০৩-০৪ সালে উন্নত ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল গ্রহণ করে জাটকা সংরক্ষণ পদ্ধতির ওপর কাজ হলে ইলিশ উৎপাদনও বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে নদী ও সাগরে জাটকা সংরক্ষণের পাশাপাশি মা ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। এতে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়তে থাকে।
গবেষকেরা বলছেন, ইলিশের তিনটি প্রজাতি আছে। সেগুলোর মধ্যে আছে পদ্মার রুপালি ইলিশ, যেটি আকারে বড় এবং স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয়। এই ইলিশের চাহিদা দেশ–বিদেশে অনেক বেশি। অন্য দুটি জাতের মধ্যে একটি চন্দনা ইলিশ, অন্যটি গুর্তা ইলিশ। এগুলো আকারে ছোট ও স্বাদও কম। এদের অবস্থান সাগরেই বেশি।
ইলিশ বেশির ভাগ সময় সাগরে থাকে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আস্তে আস্তে সাগরের লোনা পানি থেকে নদীর মিষ্টিপানির দিকে আসে। ডিম ছাড়ার পর আবার সাগরে ফিরে যায়। নিরাপদে ইলিশের ডিম ছাড়া নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ২২ দিন (অক্টোবর থেকে নভেম্বর) নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। নভেম্বর থেকে জুন—এই আট মাস ইলিশ মিষ্টিপানির নদী পদ্মা–মেঘনায় অবস্থান করে। জুন মাসের দিকে জাটকায় রূপ নেয়। এদের নির্বিঘ্নে বড় হওয়া নিশ্চিত করতে মার্চ–এপ্রিল নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। জুনের পর থেকে তারা দলে দলে আবার সাগরে ফিরতে থাকে। এরপর এই চক্র চলতেই থাকে। ইলিশ বিক্রি ও ধরা সব ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করা উচিত। বর্তমানে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাতে , দাদন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মৌসুমী ফড়িয়া বা দালাল যারা মূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করে। এতে জেলেদের কোন ভূমিকা থাকে না জেলারা হয় অসহায়। তাদের শ্রম ও ঘামে নির্মিত হচ্ছে দালাল ও মধ্যস্বত্ব ভোগিদের অট্টালিকা। জেলেরা তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে রোগে শোকে ভোগে। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মাছ ধরতে যায় নিষেধাজ্ঞার সময় এর একটি কারণ এই সময়টাতে দাদন ব্যবসায়ী ও মহাজনরা সক্রিয় থাকে না যে কটা মাছ পায় তা সরাসরি বিক্রি করে কিছুটা অর্থ কামাই করে। তাই বুলেটের সামনেও তাদেরকে দমিয়ে রাখা যায় না। এবার ১৫ তম চতুরঙ্গ ইলিশের উৎসবে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি যদিও তিনি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন, উদ্বোধনী পর্বে অতিথি ছিলেন রাওয়া ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আলাউদ্দিন ওয়াদুদ বীর প্রতীক, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট অবসরপ্রাপ্ত এম এ ওয়াদুদ, দ্বিতীয় পর্বে পাওয়ার সেলের ডিজি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন , তৃতীয় দিন উপস্থিত ছিলেন,চাঁদপুর জেলার মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব কামরুল হাসান, এডিসি জেনারেল বশির আহমেদ, সহ প্রশাসনের অন্যান্য, কর্মকর্তারা, চতুর্থ দিনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলার মান্যবর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব সুদীপ্ত রায়, কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক সেই সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হোক জাল যার জলতার। এটাই হোক নীতি, তাহলে জেলের ইলিশের প্রতি বাড়বে অনেক প্রীতি।