শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

চীনের পতনমুখী জনসংখ্যা প্রভাব ফেলবে অর্থনীতিতে

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ৪৯ বার পঠিত
আপডেট : রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:১৭ অপরাহ্ণ

 

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে জনসংখ্যা কমতে শুরু করার বিষয়টি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এই পতনমুখী জনসংখ্যা দেশটির অর্থনীতির পাশাপাশি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, দেশটির কর্মক্ষম জনসংখ্যাও কমতির দিকে রয়েছে। আর চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানে মজুরি বেড়ে যাবে। ফলে পণ্য উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে পরিচিত চীন থেকে অনেক অনেক ফরমায়েশ এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ই ফুজিয়ান বলেন, চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা এবং উৎপাদন কমে গেলে ইউরোপ ও আমেরিকায় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে।

ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা কমেছে বলে গত সপ্তাহে দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার এই নিম্নমুখী ধারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের জন্য সাময়িক কোনো ঘটনা নয়। ২০৩০ সালের পর জনসংখ্যা হ্রাসের প্রভাব পড়বে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর চীনের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪০ কোটি। সেখান থেকে এ বছর ৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষ কমে গেছে।

চীনে জন্মহার অনেক বছর ধরেই কমছে। কারণ জন্মহার রোধে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে আলোচিত এক সন্তান নীতিও ৭ বছর আগে তুলে নেয়া হয়। পতনমুখী জনসংখ্যা যে সংকটের আভাস দিচ্ছে, তা সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই। চীনা জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান বয়স নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন অর্থনীতিবিদ ও জনসংখ্যাবিদরা। বিশ্বজুড়েই বয়স্ক জনসংখ্যা অর্থনীতির জন্য একটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু যে গতিতে এই বয়স্ক জনসংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ে চীনের কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হচ্ছে। বিশেষত, মধ্যম থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার মাঝামাঝি পর্যায়ে এই বয়স্ক জনসংখ্যার বাধা এসে হাজির হচ্ছে। সহজ কথায় চীন বড়লোক হওয়ার আগেই বুড়ো হয়ে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, ৬০ বছরে প্রথমবার চীনে জনসংখ্যা কমার পাশাপাশি জন্মহারও পৌঁছেছে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। চীনের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ২০১২ সাল থেকেই হুমকির মুখে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের জনসংখ্যা এই শতকের মধ্যে চীনের অন্তত আরও ৬০ শতাংশ কমে যাবে। লন্ডনভিত্তিক আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফ্যাথম ফিন্যান্সিয়াল কনসাল্টিংয়ের সহকারী প্রধান অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু হ্যারিস বলেন, চীনের গ্রামাঞ্চলে এখনো সস্তা শ্রমিক আছে যারা শহরাঞ্চলে কারখানায় শ্রমিকের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারবে। দেশটির নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নির্মাণ খাতের এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেটুকু উৎপাদন করার কথা, তা করছে না।

সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধান পরিসংখ্যানবিদ পল চ্যাং অবশ্য মনে করেন, জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য চীনের কাছে অনেক জনশক্তি এবং সময় আছে। এখনই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ার মতো অবস্থা হয়নি। এ ক্ষেত্রে জাপান ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এই দুই দেশ তাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভারসাম্যও বজায় রেখেছে। তবে সবাই বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ, চীনের সঙ্গে কোরিয়া বা জাপানের মতো দেশগুলোর বড় পার্থক্য রয়েছে। ২০১৯ সালে চীনের একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্স এক প্রতিবেদনে জানায়, কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে চীনের প্রধান পেনশন তহবিল ২০৩৫ সালে শেষ হয়ে যাবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের গবেষণায় দেখা যায়, চীনে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই মনে করে তাদের সরকারি স্বাস্থ্য সেবাব্যবস্থা ২০১৬ সাল থেকে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস সেই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনে জন্মহার বাড়ানোর নানা উদ্যোগ তেমন সফল হয়নি। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে দেশটিকে এবার হয়তো বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে। এ জন্য জোরালো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না সেন্টারের অ্যাসোসিয়েট জর্জ ম্যাগনাস।

তার মতে, দেশটির অবসরের বয়স নিয়ে আবার নতুন করে ভাবা উচিত। চীনে পুরুষদের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবসরের বয়স ৬০ বছর। সরকারি চাকরিজীবী নারীদের ক্ষেত্রে এই বয়সটা ৫৫ বছর এবং শ্রমজীবী নারীদের জন্য অবসরের বয়স ৫০ বছর। যদিও এর আগে এই অবসরের বয়স বাড়ানোর চেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল। কারণ বয়স্ক শ্রমিকরা তাদের পেনশনের জন্য আর অপেক্ষা করতে চাইছিলেন না। চীন এরই মধ্যে রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে কিন্তু এর প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। আরেকটা উপায় হতে পারে অভিবাসীদের মাধ্যমে জনসংখ্যা বাড়ানো। কিন্তু চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ঐতিহাসিকভাবেই এ বিষয়ে অনাগ্রহী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর