পরিবেশদূষণের প্রধান হাতিয়ার প্লাস্টিক। অথচ পণ্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। এর আগে শোনা যাচ্ছিল, কোকা-কোলা ও ইউনিলিভারের মতো আন্তর্জাতিক বড় ব্র্যান্ডগুলোর প্লাস্টিক প্যাকেজিং পরিবেশবান্ধব। তবে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তা নেহাতই বিভ্রান্তিকর তথ্য।
বিশ্বের শীর্ষ প্লাস্টিক দূষণকারী প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা। চেঞ্জিং মার্কেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে কোকা-কোলা বা ইউনিলিভারের মতো বড় ব্র্যান্ডগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের তথ্য প্রচার করছে। এগুলো নিঃসন্দেহে বিভ্রান্তিকর। এ বিষয়ে চেঞ্জিং মার্কেটস ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পেইন ব্যবস্থাপক জর্জ হাডিং-রোলস বলেন, আমাদের সর্বশেষ তদন্তে দেখা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে ভোক্তাদের।
সিএমএফ ওয়েবসাইটে গবেষণাটি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বোতলের প্লাস্টিক ২৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্লাস্টিক। এ তথ্য প্রচার করতে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করেছে কোকা-কোলা। এছাড়া মেনটোস মিনটস, পারফেটি ভ্যান মিলের উৎপাদক সংস্থাগুলো নতুন কার্ডবোর্ড বক্স প্যাকেজিংকে পরিবেশবান্ধব বলে দাবি করেছে। তবে মূলত তাদের প্যাকেজিং কার্ড, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক থেকে তৈরি যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। এদিকে প্লাস্টিক কাটলারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে এর জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেয়নি স্প্যানিশ সুপারমার্কেট চেইন মার্সেডোনা। বরং এর পরিবর্তে ‘পুনর্ব্যবহারযোগ্য’ ট্যাগ ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য বলে একই ধরনের মিথ্যা দাবি করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক সুপারমার্কেট টেসকো। নতুন প্লাস্টিক প্যাকেজিং উন্নত মানের ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য বলে দাবি তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এর জন্য ভোক্তাদের প্যাকেজটি টেসকোর বড় স্টোরে ফেরত দিয়ে আসতে হবে, যা সচরাচর দেখা যায় না। গবেষণা বলছে, এ সত্ত্বেও প্লাস্টিক প্যাকেজিংটি মোটেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। প্রোক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের হেড অ্যান্ড শোল্ডারসের বোতলটিও পুনর্ব্যবহারের ঘোল খাওয়াচ্ছে ভোক্তাদের। বোতলটি সমুদ্রসৈকতের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় বলে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ সিএমএফের প্রতিবেদন বলছে, বোতলটিতে রঙ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো এটি আর পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়।
সিএমএফের গবেষণা বলছে, অধিকাংশ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য বলে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে। এর জন্য ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থও। তবে বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এ পণ্যগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহার করা দুঃসাধ্য, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই সম্ভব নয়।