শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

পোল্ট্রি খাতের জন্য আসছে নতুন কর ব্যবস্থা

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ৯৯ বার পঠিত
আপডেট : রবিবার, ২৯ মে, ২০২২, ৭:৫৫ অপরাহ্ণ

প্রথমে মহামারির ধক্কায় লোকসান গুনেছে দেশের পোল্ট্রি শিল্প। তারপর বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নতুন কর ব্যবস্থার ধাক্কা আসছে খাতটির ওপর। আগামী অর্থবছর থেকে পোল্ট্রি খাতের করমুক্ত আয়ের সীমা অর্ধেক হয়ে ১০ লাখ টাকায় নেমে আসছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ১০ লাখের পর দ্বিতীয় ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর দিতে হবে পোল্ট্রি খামার মালিকদের। আর ২০ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক আয়ের ওপর কর দিতে হবে ১০ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে—বর্তমানে এ পরিমাণ আয়ের ওপর করের হার ১০ শতাংশ। আগামী অর্থবছর থেকে মাছ ও পোল্ট্রি হ্যাচারির পাশাপাশি মাছ চাষ ও পোল্ট্রি খামারকে একক ট্যাক্স স্ল্যাবের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। বর্তমানে মাছ ও পোল্ট্রি হ্যাচারি এবং মাছ চাষের জন্য একই ধরনের করকাঠামো কার্যকর রয়েছে।

করফাঁকির সুযোগ বন্ধ করে কর সংগ্রহ বাড়ানোর লক্ষ্যে হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারই অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। কর্পোরেট খাতকে যখন করছাড়, কর মওকুফসহ অন্যান্য নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, পোল্ট্রি ও মাছ চাষের উদ্যোক্তাদের কাঁধে তখন ২০২২-২৩ অর্থবছরে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপতে চলেছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য সংগ্রামরত খাতটির অবস্থা আরও খারাপ হবে। ফিডের মূল্য ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি মূল্যবৃদ্ধি অবস্থাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে বলে মত তাদের।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন,  পোল্ট্রি খামারিরা এখন লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়ে ১২২ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ১২০ টাকায়। এই পরিস্থিতিতে তাদের ওপর আরও কর আরোপের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক। তাদের অস্তিত্বই যখন ঝুঁকির মধ্যে আছে, তখন সরকার কী করে বাড়তি কর আরোপ করে?  ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম ৬৫ শতাংশ বাড়লেও আগে থেকেই মহামারির ধাক্কায় জর্জরিত খামারিদের ওপর আমরা এই দামের ২৯ শতাংশের বেশি চাপাতে পারিনি। সয়াবিন আমদানির উপর ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের ফলে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ ৫ টাকা করে বেড়ে যাবে।

নাহার এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুর রহমান টুটুল বলেন, নতুন ট্যাক্স স্ল্যাব তাদের টিকে থাকার লড়াই আরও কঠিন করে তুলবে এবং শিল্পটির প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করবে। চড়া উৎপাদন খরচের কারণে লোকসান দিয়ে টিকতে না পেরে অনেক পোল্ট্রি খামারিই ইতিমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। খাদ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত সয়াবিনের আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করা হলে একে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এতে আরও বাড়বে তাদের ভোগান্তি। এক বছর আগে মুনাফা করে এখন লোকসান গুনলেও কর কর্মকর্তারা তা মানতে নারাজ বলেও অভিযোগ করেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্পের সবাই-ই যেকোনো মুহূর্তে ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে, তাদের আগের হিসাবের রেকর্ড যা-ই হোক না কেন। কিন্তু আমরা কর কর্মকর্তাদের এই বিষয়টা মানাতেই পারছি না।

৪০,০০০ কোটি টাকার খাত: গত চার দশকে পোল্ট্রি শিল্প বিকশিত হয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার খাতে পরিণত হয়েছে। দেশের মাংসের চাহিদার ৪০ শতাংশেরও বেশি মেটাচ্ছিল খাতটি। করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে পোল্ট্রি খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১২-১৫ শতাংশ। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় এই খাতের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে বলে জানান শিল্পসংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, মহামারির ধাক্কা থেকে পুনরুদ্ধারের যে চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা ব্যাহত হচ্ছে ক্রমবর্ধমান ফিড খরচের জন্যে।

ব্যক্তি খাতের করদাতাদের জন্য কোনো সুখবর নেই: ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে মানুষের মানিব্যাগের ওপর চাপ বাড়লেও ব্যক্তি খাতের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা আগামী অর্থবছরেও ৩ লাখ টাকাই থাকছে। সর্বশেষ ২০২১ অর্থবছরে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। এনবিআরও ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করে গ্রামীণ করদাতাদের টার্গেট করতে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর