বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্তা গ্রুপের সহযোগিতায় দেশের প্রায় ৪ হাজার নারী এখন আত্মকর্মী

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ১৫৬ বার পঠিত
আপডেট : শুক্রবার, ৮ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৩০ অপরাহ্ণ

হাজীগঞ্জ ব্যুরো
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় ‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। জাতীয় কবির এই উক্তিটি আজ চিরন্তন সত্যে প্রতিয়মান। কারণ, গত এক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু আজ নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা, তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এই এক দশকের মধ্যে আজ নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। তাদের আগ্রহ ও অভিজ্ঞতায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসার প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছেন। পারিবারিক দায়িত্ববোধের সাথে তারা ঘর-সংসার সামলে নিয়ে একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন ক্রেতাবলয়, অর্জন করেছেন গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস।
তাই নারীদের আর পিছিয়ে নয়, শুধু সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউ গ্রুপে, যার যার যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। তেমনি এক সফল উদ্যোক্তা গ্রুপ, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে রয়েছে। ‘হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্ত গ্রুপ’ নামক এ প্লাটফর্ম পিছিয়ে পড়া নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় ৪ শতাধিক নারী উদ্যোক্তা এ গ্রুপে তাদের পন্য বিক্রি করছেন।
এর পাশাপাশি বিনা পুঁজিতে সেলার হিসাবে আরো সাড়ে তিন হাজার নারী রয়েছেন এ গ্রুপে। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় ৪ হাজার নারী, এই গ্রুপের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছেন। যার পেছনে রয়েছেন জাকির হোসেন আনন্দ ও ঝুমানা নূর বিথী নামক এক সফল দম্পতি। তারা একদিকে নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে সম্মান ও সহযোগিতার হাত যেমন বাড়িয়ে দিয়েছেন।
অপর দিকে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, উত্তরোত্তর উন্নয়ন ইত্যাদির এক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তাদের স্বকীয়তা আর পণ্যের মান বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দাঁড়িয়েছেন তারা। জাকির হোসেন আনন্দের শুরুর পথটা স্বাভাবিকভাবেই মসৃণ না হলেও তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার স্ত্রী ঝুমানা নূর বিথী।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে বর্তমানে তাদের দুজনের সহযোগিতায় ‘হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্ত গ্রুপ’ এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৪ হাজার নারী আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। জাকির হোসেন আনন্দ তার ‘সিমন রেক্সিন হাউজ, সানিম ব্যাগ হাউজ, আয়াত ও ওমেন্স জোন নামক এই চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমে ‘হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্ত গ্রুপ’ কে সফলভাবে পরিচিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
তাদের অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগের ফলে সবধরনের দেশী ও বিদেশী বস্ত্র, গয়না, সাংসারিক পণ্য, শিশুখাদ্য, প্রসাধনী বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। এতে করে মানুষ ঘরে বসেই তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় করতে পারছে। অপর দিকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে নারীরা।
এ বিষয়ে কথা হয় হাজীগঞ্জের নারী উদ্যোক্ত নিশু আনোয়ার ও শিউলী আক্তার, চাঁদপুরের লাবন্য সুমী, নোয়াখালীর খাদিজা ও রাজধানীর (ঢাকা) শারমিনের সাথে। তারা সবাই বলেন, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরি নয়, বরং উদ্যোক্তা হিসাবে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। এজন্য তারা ‘হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্ত গ্রুপ’ সহ যত ধরনের প্লাটফর্ম রয়েছে, সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাজীগঞ্জ নারী উদ্যোক্ত গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জাকির হোসেন আনন্দ জানান, আমার ও আমার স্ত্রীর প্রচেষ্টায় অনলাইন সেবার মাধ্যমে এক, একজন নারী আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। এতেই আমরা খুশি ও আনন্দিত।
তিনি বলেন, অনেকে পিছিয়ে পড়ে, জীবিকার তাগিদে আবার অনেকে সংসার সামলে অবসরে শখের কাজ করেন। কিন্তু একটি প্লাটফর্মের অভাবে তারা তাদের পন্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন না। আমরা তাদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছি। আমাদের এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা তাদের পন্য বিক্রি আবার অধিকাংশ উদ্যোক্তা বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করছেন। এতে করে তারা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন।
জাকির হোসেন আনন্দ আরো বলেন, আমরা শুধু নারী উদ্যোক্তাদের পন্য ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতা করছিনা। এর পাশাপাশি আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিকনির্দেশনা, আর্থিক ও মানসিক সহায়তা এবং পণ্য, বাজার ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

কথা হয় ঝুমানা নূর বিথীর সাথে। তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবস্থায় নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। অনেক ক্ষেত্র নারীরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই আমার স্বামীর সহযোগিতায় একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪’শ নারী উদ্যোক্তার কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পেরেছি। পাশাপাশি আমাদের এ গ্রুপের মাধ্যমে আরো সাড়ে তিন হাজার নারী বিনা পূঁজিতে ব্যবসা করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর