শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১১ পূর্বাহ্ন

অশান্ত পৃথিবীতে সকলকে সীরাতুল মুস্তাকিমের পথে চলতে হবে : ছারছীনার পীর ছাহেব

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ৪৩০ বার পঠিত
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২, ৩:১২ অপরাহ্ণ

 

মোহাম্মদ রসু মিয়া 

ছারছীনা দরবার শরীফের পীর ছাহেব কেবলা হযরত মাওলানা মোহেব্বুল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ দেশের আনাচে-কানাচে শুয়ে আছে হাজার হাজার আউলিয়ায়ে কেরাম। যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দাওয়াতের কারণেই আজ এ দেশে শতকরা ৯০ ভাগ বাসিন্দা মুসলমান। এর পেছনে হক্কানি পীর মাশায়েখদের অবদান অবিস্মরণীয়। তিনি বলেন, আমরা দলীয় রাজনীতি করি না। কারও সাথে আমাদের গদির সংঘাত নেই। তবে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে কোনো আঘাত আসলে শুধু আমরা কেন কোনো মুসলমানই তা সহ্য করতে পারে না। আমরা ঈমান-আমল নিয়ে বাঁচতে চাই।
এজন্য প্রয়োজন হক্কানি পীর মাশায়েখদের সোহবতে আসা। কারণ এসব পীর মাশায়েখ সীরাতুল মুস্তাকিম তথা সহজ-সরল পথে চলেই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ একটু সুখ-শান্তির জন্য মানব
রচিত মতবাদের পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের এই প্রচেষ্টা আগাগোড়াই
ব্যর্থ। বরং ইহকালীন সুখ শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য আমাদেরকে সীরাতুল
মুস্তাকিমের পথে চলতে হবে। আর সীরাতুল মুস্তাকিমের পথ হলো নবী-রসূল ও
সাহাবায়ে কেরামদের পথ।
তিনি গতকাল সোমবার ছারছীনা দরবার শরীফের
প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম আল্লামা শাহ্সূফী নেছারুদ্দীন আহমদ (রহ.) এর ৭০ তম ও
তারই জানেশীন মুজাদ্দিদে যামান হযরত মাওলানা শাহসূফী আবু জাফর মোহাম্মদ
ছালেহ (রহ.) এর ৩২ তম ইন্তেকাল বার্ষিকী, ছারছীনা মাদরাসার তিন দিন ব্যাপী
১৩২ তম ঈসালে ছওয়াব মাহফিল ও বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহ সম্মেলনের শেষ দিন
বাদ জোহর আখেরী মোনাজাতের পূর্বে লাখো লাখো ভক্ত-মুরিদানের উদ্দেশে
গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে পীর ছাহেব কেবলা একথা বলেন।
পীর ছাহেব কেবলা আরও
বলেন, বিশ্বের দিকে দিকে আজ মুসলমানরা মার খাচ্ছে। তারা আজ অবহেলিত ও
উপেক্ষিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। এর কারণ হলো আমলহীনতা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা।
আজকের মুসলমান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে দুনিয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। নেক কাজ বাদ দিয়ে বদ কাজে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে। এটা একজন খাঁটি মুসলমানের কাজ নয়।পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন, আপনারা পীরের কাছে এসেছেন আল্লাহকে পাওয়া জন্য, পীরকে নয়। মুরিদ পীরের কাছে কখনো স্বাধীন নয়। যেহেতু আল্লাহকে পাওয়ার জন্য পীরের হাতে হাত রেখেছেন। তাই পীরের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চললেই আল্লাহকে পাওয়া যাবে। অপরদিকে ত্বরিকার নেয়ামত লাভ করতে হলে গিবত-কোয়াত, মিথ্যা
বলা, পারস্পরিক শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ, আরাম ভক্ষণ, সুদ-ঘুষ, বেপর্দেগী
এসব খারাপ বদ অভ্যাসগুলো পরিহার করতে হবে।
পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন,
আল্লাহ ও রসূল (সা.) এর প্রতিটি হুকুম-আহকাম মেনে চলাই আমাদের প্রধান কাজ।
তাই ছেলে হবে পিতার ন্যায়, মুরিদ হবে পীরের ন্যায় এবং উম্মত হবে প্রিয় নবী
(সা.) এর নমুনায়। তিনি মাহফিলে আগত ভক্ত মুরিদানদের নিজ নিজ সন্তানকে
হক্কানি আলেম বানাতে দ্বীনি মাদরাসার শিক্ষায় শিক্ষিত করার আহ্বান জানান।
এছাড়া
হযরত পীর ছাহেব কেবলার বড় ছাহেবজাদা ও বাংলাদেশ জমইয়তে হিযবুল্লাহর সিনিয়র
নায়েবে আমীর আলহাজ হযরত মাওলানা শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমদ হুসাইন
বলেন, যারা দায়িত্বশীল; পরকালে আল্লাহর দরবারে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে
প্রশ্ন করা হবে। সমাজের নিচু থেকে শুরু করে উঁচু স্তর পর্যন্ত কেউ পরকালীন
জবাবদিহিতা থেকে বাঁচতে পারবে না। তাই সর্বদা দায়িত্বশীলদের আল্লাহর ভয়
হৃদয়ে লালন করে প্রতিটি কাজ সম্পাদন করা উচিত।

লোকে লোকারণ্য ছারছীনা
ছারছীনার ১৩২ তম ঈসালে ছওয়াব মাহফিলের শেষ দিন স্মরণকালের সর্ববৃহৎ মুসল্লিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। দেশের প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রলার, অন্যান্য হাজার হাজার যানবাহনযোগে পীর ভাই, মোহেব্বীন ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ গুনাহ মাফের আশায় এবং মরহুম পীর ছাহেব কেবলাদ্বয়ের ও বর্তমান হুজুরের ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ এবং নেক দোয়া লাভের আশায় ছারছীনার এই পুণ্যভূমিতে হাজির হয়। মাহফিলের সুবিশাল প্যান্ডেলসহ সন্ধ্যা নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাশ ও মাগুরার আশপাশসহ কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এখানে এতো লোকের সমাগম হয় যা কল্পনাতীত। আখেরী মোনাজাতের পূর্বে মিলাদ ও কিয়ামে ইয়া নবী সালাম আলাইকার সুর ও আমীন-আমীন ধ্বনিতে এবং চোখের পানিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়। মনে হয়েছিল যে, আল্লাহর আরশও যেন কেঁপে উঠেছিল। এমন
অভূতপূর্ব দৃশ্য ও অনুভূতি কাছে না গেলে সত্যি উপলব্ধি করা দুরূহ ব্যাপার।

তিনদিন ব্যাপী ছারছীনা শরীফের পবিত্র ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলের হযরত পীর সাহেব কেবলার নসীহতের সার সংক্ষেপঃ
পীর সাহেব হুজুর ও শাহ সাহেব হুজুরের নসিহতসমূহ বাস্তবজীবনে যেন প্রতিফলিত করতে পারি তাওফিক দান করুন। তাওবাকে কবুল করুন। আমীন। পীর সাহেব হুজুর আমাদের কল্যাণের জন্যই নসিহত করেছেন যাতে আমরা সংশোধন হতে পারি। যেমন সন্তান ভুল করলে বাবা নসিহত করেন এবং শোধরায়ে দেন।
আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরীফের হযরত পীর সাহেব কেবলার মূল্যবান নসিহত বা’দ মাগরিব (১৩/০৩/২০২২)
১.🖋 এমন মুবাল্লিগের কথা শুনবেন না, যে গিলে একটা, বের করে আরেকটা, এমন মুবাল্লিগের কোনো দরকার নেই।
২ আদর্শের ব্যাপারে কোনো আপোষ চলে না।
৩.আমাদের সংগঠনের নাম বাংলাদেশ জমিয়তে হিজবুল্লাহ এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন কেউ একে রাজনীতির সাথে মিলাবেন না।
৪. বাসায় পর্দা করবেন পর্দা করা ফরজে আইন নামাজ যেমন ফরজ পর্দা তেমনি ফরজ বিধান।
৫. শুধু মুরিদ হলেই চলবে না তরিকা মশক করতে হবে । ওয়াজ করা খুবই সহজ কিন্তু তরিকা মশক করা ও নিয়মিত আমল করা এটি একটি কঠিন কাজ।
৬. সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলবেন। কারো গীবত শেকায়েত করবেন না ,চোগলখোরী করবেন না, কেউ কোন কথা বললে সেটা যাচাই বাছাই করবেন তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।
৭. আমরা সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইন ভঙ্গ করবেন না, আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না।
৮. সকলেই তাকওয়ার পোশাক পরবেন আমাদের জামা হবে গোল নেসফেসাক জামা ।পাজামা ,টুপি এগুলো মরহুম হুজুরদ্বয়ের মতো হবে।
৯. কেউ কোন পদ পদবী পেলে সেটি নিয়ামত হিসেবে মনে করবেন ।এর অপব্যবহার করবেন না দ্বীনের ওপর চলার জন্য বারবার তাগিদ দেন। নিজের সিলসিলা ও আদর্শকে জলাঞ্জলি দিবেন না।
১০. সাইন বোর্ডের মুবাল্লিগ, সাইনবোর্ডের মুরিদ এগুলো হবেন না নিয়মিত তরিকা মশক করবেন আমল করবেন।
১১. আমি কাউকে খেলাফত দেয়োনা কারো খেলাফত কাটিও না। এটা যার যার আমলের মাধ্যমে অর্জন করে নিবেন।
১২. হালাল খাবার ভক্ষণ করবেন এবাদতের দশভাগের নয়ভাগ হালাল খাবারের উপর নির্ভর করে। ফাসেক ফুজ্জার দাওয়াত দিলে তাদের কে বেশি দিবেন আপনি নিবেন কম। হাদীয়া দিবেন ৫০০ খাবেন ১০০।

১৩.সাবধান আদর্শের বাইরে ছেলে বিয়ে করাবেন না এবং মেয়ে বিয়ে দিবেন না।

১৪. আমি আলিয়া মাদ্রাসার বিরোধী নই, আমি সহ- শিক্ষা বিরোধী।

১৫. চলার পথে দ্বীনিয়া মাদ্রাসা পেলে, এক টাকা হলেও দান করে যাবেন। অনেক টাকা দরকার নাই, বরকতের এক টাকাই অনেক।

১৬. ব্যবহারে উদার পন্থী, আদর্শের সময় কঠোর পন্থী। আদর্শের ব্যাপারে কাউকে আপোষ করা যাবে না।
হযরত পীর সাহেব হুজুর কেবলা মা. জি. আ.
১৭. মাথায় পাগড়ী পরিধান করবেন।
১৮. দীনিয়া মাদ্রাসা করবেন বারবার দীনিয়া মাদ্রাসার কথা বলছি এর পিছনে হেকমত আছে। ইঙ্গিতে বুঝে নিবেন । কার নির্দেশে করছি।
১৯. প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে লাইব্রেরী করবেন আমাদের সিলসিলার কিতাবগুলো ক্রয় করবেন এগুলো পড়বেন।
২০. ইউটিউব, ফেসবুকে সবার ওয়াজ শোনা যাবে না আমাদের সিলসিলার হক্কানী আলেমদের আলোচনা শুনবেন।
২১. পীর লেখার ব্যাপারে সতর্ক করেন। বলেন পীর হইও না বাবা মুরিদ থাকো এতেই কল্যাণ রয়েছে।
“২২.গ্লাস থাকলে দুধও খাওয়া যায় মদও খাওয়া যায়। দেশকে ভালোবাসবে। দেশের খেদমত করবে। দ্বীন কায়েম করবে। দ্বীনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

২৩.”আদর্শের বেলায় কোন আপোষ নেই”
স্বার্থের জন্য আদর্শকে বিসর্জন নয়
২৪.”যারা বাতেল তারা বাতেলই এর একটি কাজও যদি বাতেল হয় সবটাই বাতেল”

২৫.”লেবাসকে ঠিক কর আজ লেবাসে ঘুন ধরেছে। পড়তে হবে সুন্নাতি লেবাস
২৬. দুই নৌকায় পা দিও না এক নৌকায় পা দাও বাবা বুঝেশুনে পা দাও”

২৭.আজ যদি আলিয়া ঠিক মত চলতো তাহলে দ্বীনিয়ার প্রয়োজন হতো না। আমি আলিয়া মাদরাসার বিরুধী নই বরং সহশিক্ষা বিরোধী”
২৮.”বিয়ে সাদির ব্যাপারে খুব সাবধান। বাতেল আক্বিদার পাত্র/পাত্রী এনে ফেতনায় জড়িয়ে পড়বে না। সুন্দরী হলেই বিয়ে নয় ”

২৯.”হালাল খেতে হবে হারাম খেলে দিল শক্ত হয়ে যাবে, কান্না আসবে না। ফাসেকের বাড়িতে খাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বিকল্প পথ বাছাই কর। বিপাকে পড়ে গেলে আগে কিছু দিয়ে এরপর খাও মানে ৫৳ দিয়ে ১৳ খাও।”

৩০.”যে যেটাই মনে করুক আমার আদর্শে বা আমলে যেন বিঘ্ন না হয়”
৩১.”ওসতাদকে সম্মান, মহব্বত করবে কামিয়াবি হতে পারবে”
৩২.বেদ্বীনের পোশাক গায়ে দিতে দিতে এটা আমাদের পোশাক হয়ে গেছে।
৩৩.ছেলেকে তরবিয়াত দিতে হবে। নামাজ, রোজা ইত্যাদির তরবিয়ত দিতে হবে সে স্কুলে বা কলেজে পড়ুক। ইসলামিক বিধিবিধান শিক্ষা দিবেন।
৩৪.পীর ভাই পীর ভাই একে অন্যের পিছনে পড়ে থাকবেন না। বিশেষ করে গিবত শিকায়েত, টাকা পয়সা লেনদেন ইত্যাদির ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। খুব সতর্ক” থাকবেন।

আল্লাহপাক আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবী দান করুক।
আমিন.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর