বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

বাবা তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি

মেঘনার আলো ২৪ ডেস্ক / ৬১৬ বার পঠিত
আপডেট : শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:২৪ অপরাহ্ণ

 

জন্ম – ১৩.০৬.১৯৪০ ইং
মৃত্যু – ১৮.০১.২০১৪ ইং, সময় – রাত ২.৩০ মিনিট
বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়, কেউ বলে না তোমার মতো ‘কোথায় খোকা, ওরে বুকে আয়’। বাবা কত রাত কত রাত দেখি না তোমায়, কেউ বলে না কোথায় মানিক ওরে বুকে আয়। চশমাটা তেমনি আছে, আছে লাঠি ও পাঞ্জাবি তোমার, ইজি চেয়ারটাও আছে, নেই সেখানে অলস দেহ শুধু তোমার। আজানের ধ্বনি আজও শুনি, ভাঙবে না ভোরে ঘুম জানি। শুধু শুনি না তোমার সেই দরাজকণ্ঠে পড়া পবিত্র কোরআনের বাণী।
হ্যাঁ বাংলা ব্যান্ড শিল্পী জেমসের একটি প্রিয় গানের মতোই আজ বাবাকে দিন, মাস শেষ হয়ে বছরও পেরিয়ে গেল কিন্তু দেখি নাই। সবইতো ঠিকমতই আছে। বাবার লাঠি, চশমা, পাঞ্জাবি ও অজিফা এবং আমরা সকলে। শুধু আমার বাবা নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

আমার বাবা মরহুম মো. মোতালেব হোসেন (মোতালেব কেরানী নামে পরিচিত) ১৩ জুন ১৯৪০ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরভাগল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা শরীয়তপুর জেলায় লজিং থেকে পড়ালেখা করেছেন। ছোটবেলায়ই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছিলেন। চাকরি করতেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে। ৩০ বছর চাকরি করেছিলেন। ১৯৬২ সালে এসএসসি পাস করার পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি, পারিবারিক সমস্যার কারণে।

আমার বাবা ছিলেন সৎ, নিষ্ঠাবান ও অত্যান্ত পরিশ্রমী। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত থাকতেন। যেমন বাবার দিন শুরু হতো ফজরের নামাজের পর অজিফা পড়ে। হাল্কা নাস্তা করে মাঠে যেতেন নিজের জমি-জমা দেখতে। তারপর গোসল করে নাস্তা সেরে অফিসে যেতেন। অফিস থেকে বেলা ১/২টায় বাড়িতে ফিরতেন। আবার মাঠে যেতেন। মাঠ থেকে এসে গোসল করে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিতেন। আসরের নামাজ পড়ে আবার চলে যেতেন ওনার অফিসে। রাত্র ৮টা পর্যন্ত অফিসের কাজ করতেন। ৯/১০টায় বাড়িতে এসে রাতের খাবার খেতেন। এরপর শুরু হতো এলাকার সালিস-বৈঠক। চলত মধ্যরাত পর্যন্ত। সবশেষে ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঘুমাতেন। এই ছিলো আমার বাবার প্রতিদিনের কর্ম।

বাবা মাঝে মাঝে আমাদের শাসন করতেন। বাবার শাসন ছিল এমন, মাকে বলতেন আজকে সন্ধ্যায় একটা চিকন জিংলা (লাঠি) রাখবা ওদের পিঠের চামড়া তুলে ফালামু এই পর্যন্ত। তবে আমি ছোট ছিলাম বিধায় মনে পড়ছে না তবে শুনেছি বড় ভাইকে (হুমায়ুন কবির সৌদি প্রবাসী) নাকি বাবা প্রচন্ড শাসন করতেন, প্রয়োজনে মারতেন। তবে আমার বড় ভাইও নাকি প্রচন্ড দুষ্টামি করত।

আমার বাবার ৮ সন্তান। ৬ বোন আর ২ ভাই। বাবার এই আট সন্তানের মধ্যে বাবার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ছিলাম আমি। আমি বাবার কাছাকাছি সবচেয়ে বেশি ছিলাম। আমার জন্মের পর থেকে বাবার মৃত্যু পর্যন্ত। মাঝে তিন বছর বাবাকে ছাড়া কাটিয়েছি । ভাগ্য বদলাতে বাবাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম দুবাইতে ।

আমার জানামতে বাবা আমাকে একদিন কোন এক ঝামেলায় দু’টি থাপ্পর মেরেছিল। আর রাতে এসে আমার মায়ের কাছে বলে কেঁদেওছিলেন। আর আমিও আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাবার সাথে উচ্চস্বরে একটি কথাও বলি নাই। সব সন্তানের কাছেই তার বাবা প্রিয় থাকে। কিন্তু আমি আমার বাবাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসতাম।

আমার বাবা খুবই সাদাসিদে জীবন জাপন করতেন। কোন উচ্চাকাঙ্খা ছিল না, ছিল না কোন লোভ। বাবা যদি চাইতেন তবে উনার সময়ে প্রচুর সম্পত্তির মালিক থাকতে পারতেন। বাবার মধ্যে সেই লোভ ছিল না। বাবার প্রথম জীবনে যে সম্পত্তি গড়েছিলেন তার অর্ধেক উনার ছোট ভাইয়ের নামেও দিয়েছিলেন। বাবার মধ্যে হিংসে ছিল না। আমার বাবা জীবনে অনেক কষ্ট করেছিলেন। চাকরির পাশাপাশি জমি জমা, শাক-সবজি ও ফল-ফলাদির চাষ করতেন সাথে পুকুরে মাছের চাষও করতেন।
চাকরি শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে ব্যবসাও করেছিলেন প্রায় ১১ বছর। শেষ জীবনে এসে দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। আমার বাবা প্রচুর সিগারেট খেতেন। বাবার কাছে শুনেছি তিনি যখন শরীয়তপুরে লজিং থেকে পড়াশুনা করতেন তখন ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় একজন বুড়া লোক প্রচন্ড শীতের মাঝে বাবার কাছে কাচারিতে (লজিং মাস্টারের থাকার স্থান) এসে বলল, কি স্যার শীতে কাঁপতেছেন। এই লন একটা বিড়ি খান। দেখবেন ঠান্ডা চলে গেছে। তখন বাবার অনেক বারণের পরও বুড়া মিয়া বাবাকে সেদিন যে বিড়ি খাওয়া শিখিয়েছিলেন তা অব্যাহত ছিল মৃত্যুর ৬ মাস আগ পর্যন্তও।
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সবাই মিলে আলোচনা হলো বাবাকে বলা যাবে না যে বাবার ক্যান্সার হয়েছে,  শুনলে হয়তো তিনি ভয় পাবেন । তো সবাই যখন দেখলাম বাবা এই ক্যান্সারের মধ্যেও সিগারেট খাচ্ছেন তখন আবার সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলো বাবাকে বাবার রোগ সম্বন্ধে জানানো হবে, জানানোও হলো। কিন্তু তিনি বিশ্বাসই করেন নাই যে ওনার ক্যান্সার হয়েছে। বাবা মনে করতেন সিগারেট ছাড়ার জন্য সবাই ক্যান্সারের কথা বলছে। শেষ পর্যন্ত সিগারেট ছেড়েছেন জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন কারও কোন কিছুই করার ছিল না। ক্যান্সার ধরার পর ডাক্তার বলেছিলেন রোগীকে তরতাজা জিনিসপত্র খাওয়ানোর জন্য। গ্রামে তেমন ভালো মাছ, শাক-সবজি, সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছাড়া পাওয়া যায় না তাই বাবাকে শহরে আমার কাছেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং চেষ্টা করছি বাবাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য। মাকে সবসময় বলতাম মা আপনার বউমার দিকে না চেয়ে থেকে বাবাকে জিজ্ঞেস করবেন আজকে কী খাবেন। বাবা যা বলবেন তাই রান্না করবেন। খাবার বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মা তাই করতেন। আর বাবা সবসময় মাকে বলতেন আমার ছেলেটার সব টাকা আমার পিছেই শেষ করে দিচ্ছে। মা বলতো, আপনি শুধু তার জন্য দোয়া করেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ১ সপ্তাহ বাবা কোন খাবার এমনকি পানি পর্যন্ত খেতে পারেননি। আমরা যখন খেতাম মা তখন বাবাকে জিজ্ঞাসা করতেন আপনার কেমন লাগে এই যে আমরা খাইতেছি, তখন বাবা বলতেন যে এটাই মনে হয় যে একদিন আমিতো তোমাদের মতো খেয়েছিলাম এবং মনে চায় এখনও খেতে, তখন মা নীরবে নীরবে কেঁদে চোখের পানি ফেলতেন আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন হে আল্লাহ তুমি আমার স্বামীকে সুস্থ করে দাও।
মৃত্যুর আগের দিন গ্রামের এক চাচাত ভাইয়ের বৌ-ভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম স্ত্রী ও আমার ছেলে জিহাদসহ। তো জিহাদকে বললাম, বাবা যাও দাদাকে সালাম কর। জিহাদ বলল, আমি পারি না। তখন ছোট জিহাদকে শেখানোর জন্য আমি ও আমার স্ত্রী বাবাকে সালাম করলাম আর জিহাদকে বললাম এভাবে সালাম করতে হয়। সেই সালামই আমার বাবাকে আমার জীবনের শেষ সালাম ছিল তখনতো আর বুঝতে পারি নাই। বৌ-ভাতে বাবার চাচাতো ভাইসহ এলাকার অনেক লোকজন এসেছিল চাঁদপুর ক্লাবে। তার মধ্যে ১০/১৫ জন আমার বাসায় এসেছিলেন বাবাকে দেখতে। বাবার তখনকার অবস্থা দেখে উপস্থিত বাবার চাচাত ভাই খোরশেদ কাকা, মনোয়ার কাকাসহ আব্বাছ ভাই, মজিব ভাই সহ যারা এসেছিলেন তারা তাদের চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে সবাই জোর করে বাবাকে বলেছিলেন আমরা গাড়ি আনি, আপনাকে বাড়ি নিয়ে যাব।
তখন প্রচুর শীত ছিল। বাবা সবাইকে বলেছিলেন, শীত একটু কমলে আমি বাড়ি যাব, আর সবার সাথে দেখা করব। সবাইকে আমার জন্য দোয়া করতে বলবি। তারা চলে গেলেন। আমিও অফিসে চলে গেলাম। হঠাৎ সন্ধ্যা ৭টায় আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলল, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আস, বাবা জানি কেমন করতেছে। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম বাসায়। গিয়ে দেখলাম বাবা যেন কেমন করছে। আমি বাবাকে ছোট বাচ্চার মতো কোলে তুলে বললাম বাবা ও বাবা আপনার কাছে কেমন লাগে। বাবা আমার হাত টেনে নিয়ে উনার পেটে ধরে বলল, বাবা এখানে প্রচন্ড জ্বলে।
আমি আর আমার দু’ চোখের পানি ধরে রাখতে পারি নাই। কারন বাবা যে আজ প্রায় এক সপ্তাহ হলো কোন খাবার খান নাই । যে আমি সবাইকে সান্তনা ও সাহস দিয়ে রেখেছিলাম সেই আমি আজ উচ্চ স্বরে বাবাকে কোলে তুলে কেঁদে বল্লাম বাবা আমাকে ক্ষমা কর আমি আপনার জন্যে কিছুই করতে পারি নাই। হঠাৎ বাবা আমাকে বলে উঠলেন রুনা কোথায় (আমার স্ত্রী। ও চাকরি করতো প্রাইভেট হাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে)। মা বলল আপনার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই তো রুনা হাসপাতালে গেছে। বাবা বলল, আজ না গেলে কি হতো না। আমি বললাম বাবা রুনাকে আসতে বলি, বাবা বললেন ফোন কর আসার জন্য। আমি ফোন করার ১০ মিনিটের মধ্যে রুনা চলে এলো। এবার বাবা আমাদের দু’জনকে ধরে কান্না শুরু করলেন। আর বলতে লাগলেন বাবা-মা তোদের আমি কিছুই দিয়ে যেতে পারলাম না তবে দোয়া করে যাচ্ছি আল্লাহ তোদের সহায় হোন। বাসায় কান্নার রোল পড়ে গেলো। আশেপাশের বাসার সবাই এসেও কান্না শুরু করেছিলেন।
এবার বাবার পরিস্থিতি বুঝতে ফেরে বাবাকে প্রশ্ন করলাম বাবা বাড়ি যাবেন? বাবা সরাসরি উত্তর দিলেন হ্যাঁ। অথচ বাবাকে এর আগে বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে­ যেতে চাইতেন না। বাড়িতে মনোয়ার কাকার কাছে ফোন দিলাম, কাকা বাবাকে নিয়ে আসব। কাকা তখন মসজিদে (আব্বার অনেক পরিশ্রমের ফসল এই মসজিদ) মিটিং এ ব্যস্ত। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে নিয়ে আয় আমরা সবাই ভাইয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকব। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার শাশুড়িসহ নিকটাত্মীয়রা আসলেন। বাবা সবার কাছ থেকে দাবি ছাড়ালেন। আর বাবা বললেন, আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন এবং মাফ করে দেবেন। এরপর আমি অ্যাম্বুলেন্স খবর দিলাম। অ্যাম্বুলেন্স আসার পর বাবাকে আমি কোলে তুলে চার তলা থেকে নামাতে গেলে তৃতীয় তলায় গিয়ে আর পা সামনের দিকে এগুতো পারি নাই পায়ের কাপনিতে। তখন পাশের বাসার ভাই (জুবায়েরের আব্বা) বললেন, ভাই আপনি খালুজানকে আমার কোলে দেন, আমি নিচে নিয়ে যাই। আমি উনার কোলে দিলে উনি গাড়িতে তুলে দিলেন। আমি মা, আমার স্ত্রী-সন্তান ও ছোট বোন হাছিনাসহ রওয়ানা হলাম ফরিদগঞ্জে আমার নিজ গ্রাম চরভাগলে।
বাবার ছিল থাইরয়েড ক্যান্সার। তো বাবার মুখে প্রচুর দুর্গন্ধ ছিল। তারপরও বাবার কষ্ট হবে বিধায় বাবার মাথার নিচ দিয়ে আমার হাত ডুকিয়ে মুখোমুখী হয়ে বাবাকে বুকের মধ্যে নিয়ে চলতে থাকলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর পর ছোট বোনকে বল্লাম ষ্প্রে করার জন্যে। কারণ, গন্ধে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। গ্রামের লোকজন বাবার জন্যে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। রাত্র তখন ১১টা হবে, বাড়ি পৌঁছলাম। কয়েকজন মিলে বাবাকে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে গেলেন। বাবার এই অবস্থা দেখে এলাকার লোকজন কান্নাকাটি শুরু করে দিল। বাবার জ্ঞান তখনও পুরোপুরি ছিল। যেই আসছে বাবা তাকেই চিনে বলছেন কেমন আছেন, কেমন আছস? বাড়ির মসজিদের ইমাম সাহেব আসলেন মোয়াজ্জিনসহ বাবার সাথে দেখা করতে। যাওয়ার আগে বাবাকে তওবা করালেন। মাকে বললাম বাবার নামাজ কাজা আছে কিনা। মা বললেন মাগরিবের নামাজ কাজা আছে।
বাবা সবাইকে বললেন তোরা সবাই এখন যা আমি একটু ঘুমাবো। কাল সকালে সবাই আসিস আমাকে দেখতে। সবাই যাওয়ার পর বাবাকে মা মাগরিব ও এশার নামাজ এক সাথে পড়ালেন। আমরা সবাই রাতের খাবার খেলাম। বাবার কাছে আমি, মা, ভাবি, মেঝ আপা, সেজ আপা ও ছোট বোনসহ সবাই বসে রইলাম। বাবা মাকে আর ছোট বোনকে বললেন, তোরা একটু ঘুমিয়ে নে। অনেক রাত্র ঘুমাতে পারিস নাই আমার জন্য। মা যেতে চাননি, কিন্তু আমাদের অনেক বলার পর মা আর ছোট বোন ঘুমাতে গেল। কিছুক্ষণ পর ভাবিও চলে গেল। রইলাম আমরা তিন ভাই বোন। আমি তখন সুরা ইয়াছিন, সূরা আর-রাহমান ও বিভিন্ন দুরূদ শরীফ পড়তে লাগলাম আর বাবাকে বললাম, আমার সাথে মনে মনে পড়ার জন্য। বোনদের একটু তন্দ্রার ভাব হলো। আমি এতক্ষণ চেয়ারে বসেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বাবা জোরে বাবা বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলে আমি তাড়াতাড়ি খাটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বল্লাম কি বাবা ? বাবা মনে হয় সেই সময় কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন কিছুক্ষণ পর বাবা ইশারায় নামাজ পড়তে লাগলেন তখন রাত্র ২টা।
মেঝ বোন বাবাকে প্রশ্ন করল বাবা কিসের নামাজ পড়তেছেন। বাবা আস্তে আস্তে বললেন জানিস না এখন কোন নামাজের সময় হয়েছে। তখন আপা বললেন, ও বাবা এখনতো তাহাজ্জুত নামাজের সময় হয়েছে। বাবা মাথা নাড়লেন। কিছুক্ষণ পর বাবা আবার বাবা বাবা বলে উঠলেন। আমি বাবাকে বুকের মধ্যে নিয়ে বললাম কী বাবা। বাবাকে একটু পানি খাওয়ালাম। মেঝ বোন বাবাকে বলতে লাগলেন বাবা আমার বুকে মাথা দিয়ে একটু ঘুমের চেষ্টা করেন। সেঝ বোন বাবার পা জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। মেঝ  বোনও একটু চোখ বন্ধ করে ঘুমের চেষ্টা করলেন।
তখন আমি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে একটু শব্দ করে দোয়া পড়ছি আর বাবাকে বলতেছি বাবা আমার সাথে একটু মনে মনে দোয়া পড়েন। এবার যেন বাবা কেমন করে উঠলেন। ঘড়ির কাটা তখন রাত্র ২.২৫ মিনিট। বাবা চোখগুলো বড় বড় করে দাঁতগুলো কামড়িয়ে উঠলেন। বাবার এই চেহারা আমি আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্তও ভুলব না। এরই মাঝে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম আপাগো বাবা যেন কেমন করতেছে। তখনো বাবা মেঝ বোনের কোলে। আপা বাবাকে বালিশে শুইয়ে দিলেন। দৌঁড়ে মা আসলেন আর বলতে লাগলেন তোরা তোদের বাবার মুখে পানি দেস নাই কেনরে। মা নিজ হাতে বাবাকে জীবনের শেষ পানিটুকু পান করালেন। আর বাবা এই পৃথিবী, আমাদের, আত্মীয় স্বজনদের, পাড়া-প্রতিবেশীদের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে (ইন্নালিল্লাহে……….রাজেউন)।
বাবা যে এত তাড়াতাড়ি চলেন যাবেন কল্পনাও করিনি। যদি জানতাম বাড়িতে নিলে বাবা রাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, তাহলে নিতাম না। মৃত্যু যার যেখানে লেখা থাকে সেতো সেখানেই যাবে এটাতো মহান আল্লাহর হুকুম। জন্ম হলে মৃত্যু হবে এটাই সত্যি।
আমার বাবাকে আমি অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। আমিন।

লেখক
মো.শওকত করিম
সম্পাদক ও প্রকাশক

মেঘনার আলো

০১৬২৮-৮০৪৮৩৯


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

এক ক্লিকে বিভাগের খবর